1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ 

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

আব্দুস সামাদ
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি

আদিতমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) নুরে তাসনিমকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে এবং ৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টায় কলেজটিতে সরেজমিনে তদন্ত করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর হয়নি।

অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা গেছে, আদিতমারী সরকারি কলেজটি ০৮/০৮/২০১৮ ইং তারিখে সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারিকরণের পরপরই কলেজটির অধ্যক্ষ অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিবেশ তৈরি করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। বেসরকারি আমল থেকেই তিনি স্থানীয় আওয়ামিলীগ দলীয় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এর ছত্রছায়ায় তার পাশাপাশি থেকে কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। তিনি পদসৃজনের জন্য শিক্ষকদের জিম্মি করে জনপ্রতি এক লক্ষ থেকে পনের লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে আনুমানিক সাত কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। যারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন, তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেতন আটকে রাখাসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তিনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে সাথে জড়িত। তাঁর একনায়কতন্ত্র ও নির্যাতনে তটস্থ কলেজের দায়িত্বরত অনেক শিক্ষক- কর্মচারী। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে এমনকি চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়েছেন তিনি। গত ১৩ আগষ্ট, ২০২৪ ইং বন বিভাগের অনুমতি কিংবা কোনো টেন্ডার ছাড়াই কলেজ মাঠের তিনটি জীবিত মেহগনি গাছ বিক্রি করেছেন। যার মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা। তারমধ্যে একটি গাছ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আটকিয়ে দেয়। এ ছাড়াও কলেজ সরকারিকরণের পর থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বড় বড় জীবিত গাছ অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন, যার আনুমানিক মূল্য আশি লক্ষ টাকা। এমনকি রংপুর ধাপস্থ মেডিকেল পূর্বগেট অভিজাত এলাকায় নিজ মালিকানাধীন একটি নয়তলা এবং পাকার মাথা সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি ছয়তলা ভবনের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র তৈরির কাজে লাগিয়েছেন তিনি। জমি সহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকা। এছাড়া কালীগঞ্জে তার নিজ এলাকার আমিনগঞ্জ হাটে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গোডাউন বানিয়েছেন। এছাড়া নামে-বেনামে অনেক জমি ক্রয় করেছেন তিনি।  একাডেমিক ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে খাস কামরা হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি নিয়মিত কলেজে আসেন না। নির্দিষ্ট সময়ের আগে দর্শন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক পদ বানিয়ে নেয়া মোঃ কেরামত আলীকে দিয়ে কলেজ চালান। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন আসলেও বিকেলে বা সন্ধ্যায় শুধুমাত্র কলেজের আয়ের টাকা নেয়ার জন্য। অন্যান্য সরকারি কলেজের চেয়ে বেশি করে ভর্তি, ফরমপুরণ, সেশন ফি সহ অন্যান্য ফি অন্যায়ভাবে নেয়া হয়। লাইব্রেরি, সেমিনারের নামে ছাত্রদের কাছে টাকা নিলেও নতুন বই কোনো নেই। কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কেনা সিলেবাস বহির্ভুত বইগুলো রাখা আছে সেলফে। রোভার, বিএনসিসি, মসজিদ বাবদ ছাত্রপ্রতি বাড়তি টাকা নিলেও তা তিনি আত্মসাত করেন। শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনকালে যেমন, একাদশ থেকে দ্বাদশ, অনার্স ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ প্রতিবারই জোরপূর্বক বিধিবহির্ভূতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করা হয়। কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র আরও ভয়াবহ। এ বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক দীপুরাম বর্মনের সহযোগিতায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ আজিজার রহমান। কলেজে উন্মুক্ত টিউটোরিয়াল কেন্দ্র থাকায় সার্টিফিকেট কেনাবেচায় জড়িত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ। চাকরিতে থাকা অবস্থায় কারও কারও পরীক্ষা প্রক্সি পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে নিয়ে জনপ্রতি ৪০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন শিক্ষকচক্রটি। এজন্য অধ্যক্ষ পান জনপ্রতি ১০-২০ হাজার টাকা। সম্প্রতি কলেজ মসজিদটি নির্মাণের কাজ হাতে নিলেও প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারির কাছে জনপ্রতি দশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টিউশন ফি এর টাকা সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারিদের পাওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ নিজেই আত্মসাত করেন। এছাড়াও কলেজের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা ভাউচার সংগ্রহ করে নিজের খেয়ালখুশি মতো টাকা খরচ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৩৭.০২.০০০০.০৮৫.১৫.০০১.১৯.৬১ তারিখ- ০৫/০৩/২০১৯ মোতাবেক পদ সৃজনের লক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনে মোঃ আজিজার রহমানের নিয়োগ বোর্ডের নম্বরপত্র জালিয়াতি ও অধ্যক্ষ হিসেবে কাম্য যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে রেজুলেশনের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া রেজুলেশন বানিয়ে তা সংযুক্ত করে পদসৃজন সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিতে তাঁকে দীর্ঘ দশ মাস চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি তথ্য গোপন ও প্রতারণা করে পদসৃজনের অন্তর্ভুক্ত হন। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারির সাথে কথা বললে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তাঁদের অভিযোগ এসিআর, চাকরি স্থায়ীকরণ সহ নানান ভয়ভীতির মাধ্যমে তটস্থ রাখেন অধ্যক্ষ। এমনকি কিছু কিছু শিক্ষকের বেতন পর্যন্ত আটকিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিচার ও অপসারণ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে এডিসি(শিক্ষা) নুরে তাসনিম বলেন, আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিধি মোতাবেক ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝