1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারের উখিয়ায় বহুল-আলোচিত আরসা সন্ত্রাসী ও সেভেন মার্ডারের মূল পরিকল্পনাকারী আটক

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ১৪৫ বার পড়া হয়েছে

জামাল উদ্দীন – কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‍্যাব ১৫ এর সদস্যরা একটি পরিত্যাক্ত ঝুপুড়ি ঘর থেকে দেশী বিদেশী অস্ত্র,কার্তুজ,গুলি ও বিস্ফোরক সহ গোয়েন্দা কর্মী হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ও ক্যাম্পের হেড মাঝি মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যা কান্ডসহ সেভেন মার্ডারের মুলপরিকল্পনাকারী ও ২১টির অধিক মামলার পলাতক আসামী শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী আকিজ সহ ৫ সন্ত্রাসী ও আরসা সদস্য কে আটক করেছে।
০৯ জুন ( রবিবার) সন্ধ্যা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব ১৫ এর সদস্যরা এ অভিযান চালায়।

গ্রেফতারকৃত আরসা সন্ত্রাসীদের বিস্তারিত পরিচয় :
(১) মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী অলি আকিজ (৫০), পিতা-মৃত আবুল বাশার প্রকাশ মৌলভী নাছের, ক্যাম্প-৫, ব্লক-সি, কুতুপালং, উখিয়া, কক্সবাজার।
(২) মোঃ ফয়সাল প্রকাশ মাস্টার ফয়সেল (২৮), পিতা-মৌলভী আনোয়ার, ক্যাম্প-৬, ব্লক-ডি, উখিয়া, কক্সবাজার।
(৩) হাফেজ ফয়জুর রহমান (২৪), পিতা-মৃত মৌলভী রহমত উল্ল্যা, ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন, এস/৪, বি/৫, উখিয়া, কক্সবাজার।
(৪) মোঃ সালাম প্রকাশ মাস্টার সালাম (২০), পিতা-মৃত করিম উল্ল্যা, ক্যাম্প-৮/ই, ব্লক-বি/৪৪, বালুখালী, উখিয়া, কক্সবাজার।
(৫) মোঃ জুবায়ের (২৪), পিতা-আনু মিয়া, ক্যাম্প-২২, উনচিপ্রাং, উখিয়া, কক্সবাজার

বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এই আরসা সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর প্রভাব খাটায়। কেউ আরসার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরোধিতা করলে অপহরণসহ নির্মম হত্যকান্ডের শিকার হতে হয়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে অদ্যাবধি পর্যন্ত ২০ জন নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার শুরু থেকেই বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী চালু রেখেছে। র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ/ অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস/ গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ মুছা/ অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ নোমান চৌধুরী ও আবু তৈয়ব/ কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল সমিউদ্দিন/ ইন্টেলিজেন্স সেল এর কমান্ডার ওসমান গনি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান এবং আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজ’সহ সর্বমোট ১১২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট থেকে ৫১.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ০৫টি গ্রেনেড, ০৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৬৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ০৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের ক্রমাগত সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান, শীর্ষ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ফলে আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিস্ক্রিয় বা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক কালে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ হত্যাকান্ডের ঘটনা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশেই হ্রাস পেলেও বিগত কিছুদিন ধরে পুনরায় এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আপনারা অবগত আছেন যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিগত মে মাস থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত মোট ০৮টি হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়। হঠাৎ করে এই হত্যাকান্ড বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ এবং রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে এবং সেখান থেকে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রকাশ মৌলভী অলি আকিজ ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-৫ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে আরসার নেতৃত্ব পর্যায়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং ক্যাম্প-৫ এর আরসা হেড জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। সে নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতো এবং বিভিন্ন খবরাখবর আরসা কমান্ডারদের নিকট পৌঁছে দিতো। পরবর্তীতে সে ধীরে ধীরে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌঁছায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো স্বীকার করে যে, রোহিঙ্গাদের প্রর্ত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে মৌলভী আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ’কে নির্মমভাবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। তাছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে সংঘঠিত চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারেও সে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র‌্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হন। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথেও সে সরাসরি জড়িত ছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, ০১টি অস্ত্র, ০২টি অপহরণ, ০২টি এসল্ট, ০১টি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে ০১টি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বমোট ২১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ ফয়সাল প্রকাশ মাস্টার ফয়সেল ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-২ এ বসবাস শুরু করে ও পরবর্তীতে ক্যাম্প-৬ এ চলে আসে। সে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্প জিম্মাদার আব্দুল হাকিম, মাস্টার রফিক এবং শামসুর রহমানের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে। তার দূরদর্শী কর্মকান্ডের ফলে সময়ের ব্যবধানে সে বাংলাদেশে আরসার লজিষ্টিকস্ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পায়। তার সাথে আরসার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিয়মিত যোগাযোগ থাকায় সে ওস্তাদ খালিদ ও আরসার লজিষ্টিকস্ শাখার প্রধান মাওলানা মার্সের চাহিদানুযায়ী বাংলাদেশ হতে বিভিন্ন লজিষ্টিকস্ সরঞ্জামাদি বিশেষ করে কাপড়, শীত বস্ত্র, রেইনকোট, বুট, জুতা, মোজা ইত্যাদি লেদা বরইতলী ঘাট ও তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রেরণ করতো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত আরসা সদস্যদের বেতন ও অসুস্থ এবং আঘাতপ্রাপ্ত সদস্যদের চিকিৎসা সহায়তা তার মাধ্যমে প্রদান করা হতো। এছাড়াও সে রোহিঙ্গা যুবকদের আরসায় রিক্রুটিং করতো। তার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০-১১০ জন রোহিঙ্গা যুবক আরসায় যোগদান করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত হাফেজ ফয়জুর রহমান ২০১৪ সালে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে টেকনাফ শাহ-পরীর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়। ২০১৭ সালে তার পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প-২০ এ বসবাস শুরু করে। সে ২০১৯ সালে আরসায় যোগদান করে। সে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা হতে আরসার জন্য বিভিন্ন লজিস্টিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা সদস্যদের নিকট প্রেরণ করতো। সে আরসার নিকট প্রায় ১২০টি ওয়াকিটকি সেট ও বিপুল পরিমাণ লজিস্টিকস্ সামগ্রী এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সে ইসলামের ভুল ব্যাখা দিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গা যুবকদের আরসায় যোগদানে উৎসাহিত করতো।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সালাম প্রকাশ মাস্টার সালাম ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-৮/ই, ব্লক-বি/৪৪ এ বসবাস শুরু করে। সে ২০২০ সালের মারকাসের কমান্ডার হাফেজ সিরাজের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে। আরসায় যোগদানকৃত রিক্রুটদের পার্শ্ববর্তী দেশে প্রশিক্ষণে প্রেরণ, এ সময় তাদের পরিবারকে ৫,০০০/- টাকা এবং প্রশিক্ষণ শেষে পুনরায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে আসলে ৩,৫০০/- টাকা প্রদান করা হতো। যার বিস্তারিত হিসাব রক্ষক হিসেবে গ্রেফতারকৃত মাস্টার সালাম কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত জুবায়ের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার প্রধান কমান্ডার ও ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য শরণার্থী শিবিরে দফায় দফায় সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করতো। সে আরসার জন্য লজিষ্টিকস সামগ্রী, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতো। এছাড়াও চাহিদাক্রমে এ সকল সামগ্রী পার্শ্ববর্তী দেশে আরসার নিকট প্রেরণসহ সাধারণ রোহিঙ্গা যুবকদের আরসায় যোগদানে উদ্বুদ্ধ করতো।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন র‍্যাব অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছেন।####

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝