1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, কোটা বিরোধী আন্দোলনে কঠোর অবস্থানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪
  • ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

অনন্যা সাহা
ববি প্রতিনিধি

হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ৪ জুন পর্যন্ত লাগাতার মানববন্ধন ও বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

দীর্ঘ আন্দোলন চলমান থাকলেও ইতিবাচক ফলাফল না পেয়ে এবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধান্ত নেওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ২০২০-২১, সমাজবিজ্ঞান ২০২১-২২, সমাজবিজ্ঞান ২০২২-২৩ লোকপ্রশাসন ২০২০-২১, লোকপ্রশাসন ২০২১-২২, লোকপ্রশাসন ২০২২-২৩, পদার্থবিজ্ঞান ২০২০-২১, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ২০২১-২২,ইংরেজি ২০২২-২৩, সমাজকর্ম ২০২১-২২,সমাজকর্ম ২০২২-২৩ সেশন সহ আরো বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থী।

ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ তারিক হোসেন জানান, আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে আমরা কোটার পুনর্বহল চাইনা,সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাদ দিতে হবে,২০১৮ সালে কোটা বহাল রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করা হয়েছিলো, আজ ২০২৪ এ এসে সেটাতে হাইকোর্ট কেনো হস্তক্ষেপ করবে,এটা তো নির্বাহী বিভাগের কাজ।আমরা জানি সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ” প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে”আর এটাও বলা আছে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠির জন্য কিছুটা সুবিধা দেওয়া যাবে,সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী কোটা রাখা যেতে পারে।এখানে কথা হচ্ছে এখন নারী পুরুষ সবাই সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা পিছিয়ে নেই,মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে মাসিক হ্যান্ডসাম একটা ভাতা দেওয়া হয়,তাদের আর্থিক অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা বর্তমানে অনেক ভালো,তবে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বলে মনে করি।বর্তমানে যেটা করা হয়েছে সেটা সুষ্পষ্টভাবে সংবিধান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের সংবিধানের মুলকথা হচ্ছে সুযোগের সমতা, আমরা জানি ১৯৭১ সালে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা পাকিস্তানের এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো,বঙ্গবন্ধু একটা বৈষম্যহীন রাষ্টের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন।কিন্তু আজ আমরা লক্ষ্য করছি ১ম, ২য় শ্রেনীর চাকরিতে ৫৬% কোটা,নন ক্যাডারে ৭১%,রেলওয়েতে ৮২%,প্রাইমারিতে ৬০% নারী কোটাসহ ৯৬ কোটা বিদ্যমান,যা সুষ্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন এবং মানবাধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক,আমরা অবিলম্বে এই কোটা বাতিল চাই এবং বৈষম্যবিহীন একটা রাষ্ট চাই।

মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো.আসাদ জানান, আমরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছি কারণ যোগ্যরা যদি চাকরির সুযোগ তেমন না পাই, দেশের উন্নয়নে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ভূমিকা না রাখতে পারে তাইলে ক্লাস করে পরীক্ষা দিয়ে কি হবে?? তাদের জন্য কোটা থাকলে দেশের চালিকাশক্তি কৃষক,রেমিট্যান্স যোদ্ধা, নির্মানশ্রমিক ইত্যাদি এদের ছেলেমেয়েদের কোটা কই?মুক্তিযুদ্ধ আর ভাষার চেতনা আমাদের রক্তে বইছে,যেখানে কোনো বৈষ্যম্যের স্থান নেই।আর আমরা সেই চেতনা থেকেই বলছি,,কৃষি পরিবারের ছেলে মেয়ে হয়েই বলছি, আমাদের কোটার দরকার নেই,নিয়োগে সমতা চাই।যোগ্যতা যার আছে,, দেশের উন্নয়নের দায়িত্ব তার হাতে হবে। কোটা ব্যবহার করে,তেলা মাথায় তেল দেয়া,ধনীরা আরো ধনী হবে দেশের এমন বৈষম্য দূর করতে হবে।আমরা জানি,কোটা শুধু মাত্র পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য হবে কিন্তু যখন দেখা যাবে কোটায় চাকরি করার পর তারা আর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নেই, তখন তাদের কোটা বাতিল করতে হবে।তাহলে আমাদের প্রশ্ন,,, সরকারি কর্মকর্তা,মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে,নারীরা অনগ্রসর নয়,তাইলে তাদের কেনো কোটা থাকবে???এই অনিয়ম আর বৈষ্যমের অবসান ঘটিয়েই আমরা ক্লাসে ফিরবো।

লোকপ্রশাস বিভাগের শিক্ষার্থী আবির হোসেন লিটন জানান, বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে যাচ্ছি না৷

ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান বলেন,”দেশের ৯৫% মানুষ চাই মেধার ভিত্তিতে সমস্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হোক, অথচ স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী পার করে এসেও বাংলার ছাত্রসমাজ কে আজ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শুধু অস্থায়ী ভাবে সুর্য সন্তানদের স্বীকৃতি স্বরুপ কিছু কোটার উদ্ভব হলেও বর্তমান সময়ে এই বৈষম্য মুলক কোটার কোনো গুরুত্ব নাই।১ম-৪র্থ শ্রেনীর সকল চাকরিতে ২% প্রতিবন্ধী, ২% অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও ১% উপজাতি কোটা রেখে সমস্ত কোটা বাতিল চাই।”

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল রাজু জানান, কোটা ব্যবস্থা বর্তমান বাংলাদেশে বৈষম্যের মূল হাতিয়ার। সর্ব জায়গায় এসব নিম্নমেধার কোটাধারী শিক্ষার্থী/চাকুরীজীবি নিজেদের প্রিভিলেজ প্রাপ্ত মনে করে প্রভাব বিস্তার করছে। বৈষম্যহীন, সাম্যবাদী সমাজ গড়তে, কোটার সর্বোচ্চ সংস্কার দরকার।স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল বৈষম্যের কারণে। স্বাধীনতার পর এখনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা পদ্ধতি করা হয়েছিল। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অতঃপর তাদের সন্তানের কোটা পদ্ধতি প্রয়োজন নেই। আবার নাতিপুতির জন্যও চাওয়া মানে অযোগ্যদের হাতে দেশের দায়িত্ব দেয়া এবং এটা সম্পূর্ণ স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই শুধু মাত্র 10% কোটা রেখে সম্পূর্ন কোটা বাতিল করা যৌক্তিক ও সময়োপযোগী দাবি বলে আমি মনে করি।
এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়,উচ্চ আদালতের একজন বিজ্ঞ আইনজ্ঞ যে মতামত করেছে সেটা অযৌক্তিক। সে কি চিন্তা করে সেটা বলেছে আমার জানা নাই। রাজপথের আন্দোলোনের ভিত্তিতেই কিন্তু রাজাকারদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। সেদিন প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন? আইন জনস্বার্থ বিরোধী হলে তা পরিবর্তন যোগ্য। তা যদি শাসক করতে না চায়, তবে তা বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা।

ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শারমিলা জামান সেজুতি জানান, মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ স্বার্থ হাসিল করবে সেটি মেনে নিতে পারব না। কোটাব্যবস্থা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ-প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই চাকরি পাবে এটাই চাই।একমাত্র ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড যারা এবং যারা আদিবাসী তাদের জন্য কোঠা থাকাটা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।কারণ তাদের লড়াই টা অনেক বেশি কঠিন।এ বাদে সকল কোঠা বাতিল হোক।এমনকি নারী হিসেবে আমি মনে করি নারী কোঠা থাকাটা খুবই লজ্জাজনক। যেখানে নারী-পুরুষের সাম্যের গান গাই আমরা, সেখানে কেন এই বৈষম্য? নারী কোঠা দ্বারা নারীসত্তা এবং নারীর যোগ্যতা কে ছোট করে দেখা হচ্ছে।নারীরা এখন সবখানে এগিয়ে,পুরুষ -নারী শিক্ষার্থী দের রেশিও প্রায় সমান সেটা আমরা ক্লাসরুমে তাকালেই দেখতে পাই।নারীরা দুর্বল নয়,নারীরা সমান অধিকার চায়।তাহলে কেন নারী কোঠা?উপরে উল্লিখিত ২ টি কোঠা(প্রতিবন্ধী কোঠা ও উপজাতি কোঠা) বাদে সমস্ত কোঠা নিষিদ্ধ করা হোক।এই প্রত্যাশা ই করি।মানুষের আবেগ জিম্মি করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা—এ দুটি স্পর্শকাতর ইস্যু ব্যবহার করে, রাজনৈতিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এ অন্যায় মেনে নিব না আমরা,লড়াই চলবে।

অচিরেই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান এ সকল বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। দাবী পূরণ না হওয়া অবধি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন সহ লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝