দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) কুড়িগ্রাম সফরে এলেও প্রশাসন থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদকর্মীদের।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসন চত্বর এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সাংবাদিক কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এরপরও পেশাগত দায়িত্ব পালনে সংবাদকর্মীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে যান। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের আসন না দেওয়া ও ছবি তুলতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করে সভা বর্জন করেন সংবাদকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও উপদেষ্টার প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রামে সফরে আসছেন। তবে উপদেষ্টার এই সফর ও সাংবাদিকদের সাথে মত মিনিময় নিয়ে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের আগে থেকে অবহিত করেনি জেলা প্রশাসন।
দুপুর সাড়ে ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত সম্মেলন বয়কট করেন সংবাদ কর্মীরা।
স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টার প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রাম সফরে এলেও সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার সাংবাদিকদের জানায়নি জেলা প্রশাসন। এটি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে উপেক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের প্রতি অবহেলা।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য ও মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল হক রুবেল বলেন, ‘নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও সাংবাদিকদের অপেক্ষায় রেখে সাক্ষাত দেওয়া হয়নি। সাংবাদিক নামধারী অপসাংবাদিকতায় জড়িত দুই একজন ফেসবুক সর্বস্ব ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে উপদেষ্টার সাথে মিটিং করা হয়েছে। যারা পেশাদার ও মূলধারার সাংবাদিক তাদেরকে ঘন্টাব্যাপী বাইরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। এজন্য আমরা সকলে মিলে উপদেষ্টার কর্মসূচি বয়কট করেছি।
টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের আহ্বায়ক ইউনুস আলী বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রামে আসছেন অথচ জেলা প্রশাসন থেকে কুড়িগ্রামের সাংবাদিকদের জানানো হয়নি। এরপরও আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গেলেও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যে কারণে আমরা এ সংবাদ বর্জন করছি।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য আশরাফুল হক রুবেল বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের কথা থাকলে আমরা কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব ও টেলিভিশন ফোরামের সকল সাংবাদিকরা নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেও দীর্ঘ ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ২-৩ জন ফেসবুকে নামধারী সাংবাদিক থাকায় আমরা বয়কট করলাম।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার সফর নিয়ে জেলার সাংবাদিক কিংবা প্রেসক্লাবকে জানানো হয়নি। জেলা প্রশাসন প্রকৃত ও মূলধারার সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে চলছে।’
এ ব্যাপারে জানতে জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানাকে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর, এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মমিনুল ইসলাম মঞ্জু, মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল হক রুবেল, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি বাদশা সৈকত, ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি তুহিন, এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির ইউনুস আলী, সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সুজন মোহন্ত, নাগরিক টিভির ফজলুল করিম ফারাজি, দেশ টিভি ও দেশ রূপান্তর পত্রিকার জুয়েল রানা সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।
এদিকে সফরসূচি থেকে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক আজ বেলা ১১টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছান। সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে তিনি জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের শোবনদহ নামক স্থানে ১১ দশমিক ৫৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ উদ্বোধন করেন। এরপর আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কর্মসূচির চাল বিতরণ ও টিআর প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। বিকেলে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় চরাঞ্চলের নারীদের জীবনমান উন্নয়নকল্পে ট্রেনিংপ্রাপ্তদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করবেন। দিনভর সফর কর্মসূচি শেষে উপদেষ্টা সন্ধ্যায় তিনি কুড়িগ্রাম ত্যাগ করবেন।