1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৬:১০ পূর্বাহ্ন

নওগাঁর পত্নীতলা নন্দনপুরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবা ও ছেলে না খেয়ে রোজা, পানি দিয়ে ইফতার করতে হয়

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ প্রতিনিধিঃ

আমিও চোখে দেখি না, আমার ছেলেও দেখতে পায় না। আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে যে কয়টা টাকা পাই সেটা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। রমজান মাস কয়েকটা রোজা চলে গেল। সেহরির সময় না খেয়েও রোজা থাকতে হয় আবার ইফতারের সময় শুধু পানি দিয়েও ইফতার করতে হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনমু?

ছলছল চোখে এসব কথা বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে। তার ছোট ছেলে ১৯ বছর বয়সী মারুফও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মাটির একটি জরজীর্ণ ঘরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন এই পরিবারটি।জানা যায়, মোজ্জাফর হোসেন ছোট বেলা থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলের সহযোগিতায় রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা রোজগার করতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন মোজ্জাফর। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ে করার পরে তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। তারপর থেকে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয় না তারা। আর ছোট ছেলে মারুফ দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা অবস্থায় সড়কে এক ওষুধ কোম্পানি গাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলেন দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এতে একই পরিবারে বাবা-ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোফাজ্জর। অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোজ্জাফর হোসেন অশ্রুসজল চোখে বলেন, আগে বড় দুই ছেলেদের সাহায্য রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে যে টাকা পাইতাম তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলতো। কিন্তু বড় দুই ছেলে বিয়ের পর ছেড়ে চলে যায়। ছোট যে ছেলে ছিল, সেও দুর্ঘটনায় আমার মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এরপর আমার স্ত্রী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কিন্তু যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে না। আয় রোজগার করার মতো আর কোনো সদস্য নেই পরিবারে। এখন বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো রাস্তায় ঠিক মতো গানও গাইতে পারি না। আমার প্রতিবন্ধীর ভাতার যে কই টাকা পাই তা দিয়েও চাল কিনমু, তরকারি কিনমু, কাপড় কিনমু, না কী ওষুধ কিনমু? অনেক কষ্ট করে কোনো বেলা খেয়ে আবার কোনো বেলা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। এখন রোজার সময় ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার জোগাড় করতে পারি না। অনেক সময় ইফতারে শুধু পানি ও সেহরিতে না খেয়েও রোজা থাকতে হয়।মোজ্জাফর বলেন, ডাক্তার বলেছেন, ছেলের চোখে অপারেশন করালে দেখতে পাবে। কিন্তু অপারেশন জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, সেই টাকা নেই আমার কাছে। তাই বিত্তবানরা যদি আমাদের একুট সহযোগিতা করতেন তাহলে আমার ছেলে চোখে দেখতে পেত।মোজ্জাফরের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মারুফ বলেন, একটা সময় সবার মতো নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো, গাছ পালা দেখতে পেতাম। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে বাবার পাশে দাঁড়াব। সংসারের হাল ধরব। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমার চোখের আলো কেড়ে নিলো। এখন ইচ্ছে থাকলেও দেখতে পারি না। আমরা বাবা-ছেলে এখন সমাজের বোঝা। বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করানো হলে দেখতে পাবো। কিন্তু যেখানে এক বেলা খাবারই ঠিকমতো জোটে ‍না, সেখানে চিকিৎসা করানোর টাকা পাবো কই। দুনিয়ায় এমন কি কেউ নেই যার সহায়তায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে এবং বাবার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান জনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে তাদেরকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সমাজের বিত্তবানরা তাদের কথা চিন্তা করে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ালে পরিবারটির অভাব কেটে যাবে। মারুফ ছেলেটির চোখের ভালো চিকিৎসা করালে সে আবারও আগের মতো দেখতে পারব
উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝