1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

বিএনপি নিধনকারী চট্টগ্রামের পটিয়ার এএসপি ও ওসি এখনও বীরদর্পে।

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

 

শ‌হিদুল ইসলাম, প্রতিবেদক।

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি পেঠানো চট্টগ্রামের পটিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) আরিফুল ইসলাম নিজ চেয়ারে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।   পটিয়া থানার যোগ দিয়ে মামলা বানিজ্য করছেন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি  ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর (জায়েদ নুর)।

সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটিয়ার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে ব্যালটে নিজ হাতে সিল মারাসহ প্রতিপক্ষের লোকজনকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এএসপি আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটিয়া থেকে বিএনপি নিধনের মিশনে থাকা পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা রাতারাতি খোলস পাল্টিয়ে তারা এখন বিএনপি সেজে গেঁড়ে বসেছেন পটিয়া  থানায়। সিন্ডিকেট করে মাদক চোরাচালান ও বিভিন্ন ইউনিয়নে জমি দখল বাণিজ্যে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথেও রেখেছেন সখ্যতা।

গত চার মাসে পটিয়া থেকে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোন নেতাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশের এই চক্রটি। স্থানীয়দের অভিযোগ এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার কারণে অসংখ্য নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পটিয়া থেকে একটি সিন্ডিকেট প্রতিরাতে বিভিন্ন খামার থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন খামারিরা। এদিকে পুলিশের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। পুলিশ ব্যস্ত মাদক পাচার ও চাঁদাবাজিতে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘ গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তন হলে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাও খোলস পাল্টিয়ে ফেলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) আরিফুল ইসলাম নৌকার প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে সরাসরি ভুমিকা রাখেন। বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে নিজে নৌকার ব্যালটে সিল মারেন। এঘটনা এলাকাবাসীর কাছে প্রকাশ্য স্বীকৃত। ধরে ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের পিঠিয়েছেন প্রকাশ্যে। বিএনপির কোন নেতাকর্মী ঘরে ঘুমাতে পারেননি। নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করে অত্যাচার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসান তিনি। ২০২৩সালের জানুয়ারিতে তাকে তদবির করে পটিয়া সার্কেলে পদায়ন করেন সাবেক এমপি শামসুল হক চৌধুরী। সে এখনও আওয়ামী লীগের লোকজনকে কৌশলে সহযোগীতা করে বিএনপির লোকজনকে হয়রানি করছে। ‘

বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়া বলেন, পটিয়া পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক নুরুল ইসলাম সওদাগর, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক মান্নান চেয়ারম্যানসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে এলাকায় দেখলেই হয়রানি ও গ্রেফতার করেছিল এএসপি আরিফুল ইসলামের নির্দেশে। ওই সময় পুলিশ পরিদর্শক জায়েদ নুর জেলা ডিবি পুলিশের ওসির দায়িত্বে ছিলেন। ডিবির ওসি থাকাকালীন জায়েদ নুর ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলমের নগরীর বাসায় অভিযানের নামে আতংক সৃষ্টি করেছিলেন এই জায়েদ নূর। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদ সরকারের পরিবর্তন হলে ওসি জায়েদ নূর নিজের খোলস পাল্টিয়ে ফেলেন এবং তিনি লবিং করে যোগদান করেন পটিয়া থানায়। যোগদানের পর রাজনৈতিক ৬টি মামলা নিয়ে শুরু করেন বাণিজ্য। পুলিশের এই দুই কর্মকর্তার সাথে গোপনে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এজন্য পটিয়ায় ১৬বছর ধরে নির্যাতনকারী প্রকৃত অপরাধী আওয়ামী লীগের কোন উল্লেখযোগ্য নেতা এখনো গ্রেফতার হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলমকে ডিবির তৎকালিন ওসি জায়েদ নুর (বর্তমানে পটিয়া থানার ওসি) গ্রেফতার করার চেষ্টার একটি ভিডিও ফুটেজ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠেছে, ৬টি রাজনৈতিক মামলার এজাহারনামীয় গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় পুলিশ ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

এদিকে, সম্প্রতি পটিয়ায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সংবাদ সম্মেলন করে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ নিরীহ লোক ধরে এনে হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করতে ওসি জায়েদ নুর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এবং ওসির ডাকে ছাত্ররা সাড়া দেননি বলে সুত্র জানায়।

বোয়ালখালীর ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম পটিয়া সার্কেলে যোগদান করেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুর্বেই। কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনাসহ নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে বিজয়ী করার পরিকল্পনা করেন এএসপি আরিফুল। তার এই কুকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন জেলা ডিবি পুলিশের ওসি জায়েদ নূরকে। দুইজনে মিলে পটিয়া ও বোয়ালখালি উপজেলায় বিএনপি নিধনের মিশনে নামেন তারা। অথচ ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের যেসব সন্ত্রাসী প্রকাশ্য গুলি ও হামলা করেছে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ইতোমধ্যে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই নিরীহ। অনেক রাজনীতি সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর তদবির করে নিজের সহযোগী জায়েদ নুরকে পটিয়া থানার ওসি পদে পদায়ন করান এএসপি আরিফুল ইসলাম। বিএনপি নেতাদের হয়রানি ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে জায়গা দখল বেদখলে সহযোগিতা করছেন পুলিশের এ দুই কর্মকর্তা। প্রকাশ্যে গড়ে তুলেছেন মাদক সিন্ডিকেট। পটিয়া ও বোয়ালখালি থানার কমপক্ষে ২০টি স্পটে গড়ে তুলেছেন অঘোষিত ক্যাশিয়ার। যারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পাচার ও পটিয়া-বোয়ালখালীর পূর্ব সীমান্তের রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে চোলাই মদ পাচারের মাসোহারা আদায় করেন।

বোয়ালখালীর গোলাপ কানন বাজার এলাকায় পটিয়া সার্কেলের এএসপির নিয়োগ করা শওকত হোসেন নামের ক্যাশিয়ার বলেন, রাঙ্গুনিয়ার চিপছড়িপাড়া ও বড়খোলা পাড়া মারমা পল্লীতে তৈরী হয় চোলাই মদ। প্রতিদিন পলিথিনের ব্যাগ ও প্লাস্টিকের ড্রাম ভর্তি করে এসব চোলাইমদ বোয়ালখালী ও পটিয়া সীমান্ত পাড় হয়ে পাচার হয় চট্টগ্রাম শহরে। এসব মদ পাচারের রুট ব্যবহার করতে সার্কেল এসপি ও দুই থানার ওসির আলাদা আলাদা টোকেন রয়েছে। পটিয়া ও বোয়ালখালী সীমান্ত দিয়ে দৈনিক তিন টনের বেশি মদ পাচার হয় বলে তিনি জানান।

নগরীর পতেঙ্গা এলাকার সাবেক কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ জানান, ওসি জায়েদ নূর প্রায় সময় পতেঙ্গা বোট ক্লাবে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের লোক বলে নিজেকে গর্ববোধ করতেন। তখন থেকেই তিনি ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের হাতিয়ার হিসেবে চট্টগ্রাম শহরে কাজ করেছেন। কিন্তু রাতারাতি তিনি খোলস পাল্টিয়ে এখন বিএনপি সেজেছেন। এখন নিজেকে জেলা পুলিশ সুপারের খুবই ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচয় দেন। ফলে আইনশৃংখলার চরম অবনিত হলেও ওসি জায়েদ নুর এখনো বহাল তবিয়তে পটিয়ায় রয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্মাস এসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ‘ বর্তমান ওসি জায়েদ নুর পটিয়ায় যোগদানের পর থেকেই খামারে গরু চুরি, ডাকাতি ও এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে। বেড়েছে মাদকসেবি ও ব্যবসায়িদের উৎপাত। ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক রিদুয়ান সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহাবুব উল্লাহ, পটিয়া পৌরসভা ছাত্রদল নেতা রেজাউল ইসলাম রাজু, আল জামিয়া আল ইসলামিয়ার শর্ট কোচের ছাত্র তানজিদ সংবাদ সম্মেলন করে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হুঁশিয়ারী করেছেন। তারা দাবি তুলেছেন অবিলম্বে পটিয়া সার্কেলের এএসপি আরিফুল ইসলাম ও থানার ওসি জায়েদ নুরকে বদলি করে তাদের বিরুদ্ধে ঊঠা অভিযোগ তদন্ত পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় তারা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝