1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

শুভ মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি পবিত্র ও তাৎপর্যমন্ডিত দিন

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি:-শুভ মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি পবিত্র ও তাৎপর্য দিন । এ দিনটিকে শ্রদ্ধা এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করে বৌদ্ধরা । মধু পূর্ণিমাকে ঘিরে রয়েছে বুদ্ধের জীবনের ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ । বিশেষ করে এদিনটি ত্যাগ ও ঐক্যের মহিমায় সমুজ্জল। বৌদ্ধরা কেন মধু পূর্ণিমাকে অতি শ্রদ্ধার সাথে পালন করে থাকেন? এর তাৎপর্য ব্যাখা করতে গেলে দুটো দিক পরিলক্ষিত হয়। একটি হচ্ছে সেবা ও ত্যাগের ,অন্যটি হচ্ছে সৌর্হাদ্য, সম্প্রীতি ও সংহতির ।ত্যাগের মহিমা হলো পারিলেয্য বনের বানর কর্তৃক ভগবান বুদ্ধকে মধু দান ও হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা প্রদান।আর সৌর্হাদ্য ও সংহতি হলো কৌশম্বীর ঘোষিতারামে বিবদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।কৌশম্বীর ঘোষিতারাম সর্বমানবের পুণ্যময় তীর্থে মহামানব গৌতম বুদ্ধ অবস্থান করছিলেন । সেখানে ভিক্ষুদের যাপিত জীবনের অংশ বিনয়ের ছোট্ট একটা অনুসঙ্গ নিয়ে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে সূচিত হয়েছিল বিরোধ, বিবাদ এবং বিভাজন।এ বিভক্তি রেখা দেবকুল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছিল। ফলে দ্বিধাবিভক্ত ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় স্বয়ং তথাগত বুদ্ধ ছুটে গিয়েছিলেন অনন্ত করুণাধারায় সিক্ত হয়ে । কম্ভুকণ্ঠে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন – ’ হে ভিক্ষুগণ ! বিরোধ সম্যক জীবন ধারার অপমৃত্যু ঘটে । সংঘের একতা বিনষ্ট হয় । তবু এ বিরোধের অবসান হয় না ।’ ভগবান বুদ্ধ বিবদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করলেন বটে কিন্তু বুদ্ধের প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে তাদের নিজস্ব মান -অভিমানের কারণে পুনরায় আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে ।
ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের এ অবস্থা দেখে একলা নীতি গ্রহণ করলেন । সিদ্ধান্ত নিলেন কৌশাম্বী ছেড়ে পারিলেয্য বনে অবস্থান করার । ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের বিবদমান কলহের কারণে ত্রৈমাসিক দশম বর্ষাবাস অধিষ্টান পারিলেয্য বনেই করলেন ।পারিলেয্য বনে ভগবান বুদ্ধের আগমনের সাথে সাথে বনের সমস্ত পশু-পাখি ,বানর, হস্তিরাজসহ সবাই আনন্দে উদ্বেলিত হলো।

পারিলেয্য বন থেকে ভগবান বুদ্ধ যখন ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বের হতেন হস্তিরাজ ভগবান বুদ্ধের পাত্রটি আপন শুড়ে বহন করে জনসাধারণের গমনাগমনের পথ পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন । পুনরায় ভগবান বুদ্ধের ভিক্ষা চর্যা শেষ হলে ফেরার পথে আগবাড়িয়ে নিয়ে আসতেন । বনে হস্তিরাজ ভগবান বুদ্ধের স্নানের জলের ব্যবস্থা করতেন এবং বনের হিংস্র জন্তুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সারা রাত পাহারায় রত থাকতেন । বন থেকে নানা রকম ফলমূল সংগ্রহ করে ভগবান বুদ্ধকে দান করতেন । বানরও আপন দল ত্যাগ করে বুদ্ধের সেবায় রত হলেন।
এভাবেই পারিলেয্য বনে বুদ্ধের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত সুন্দর ভাবে কাটতে লাগলেন । এদিকে বৌদ্ধ উপাসক উপাসিকাগণ কৌশম্বীর ঘোষিতারামে গিয়ে দেখলেন ভগবান বুদ্ধ বিহারে নেই । বুদ্ধের অনুপস্থিতিতে কৌশাম্বীর আকাশে বাতাসে করুণ মূর্ছনা ও নিস্তব্ধতা দেখা দিল। উপাসক উপাসিকা সবাই জানতে চাইল ভগবান বুদ্ধ কোথায় ? কোন উত্তর নেই বিবদমান ভিক্ষুগণের মধ্যে । ভিক্ষু সংঘের মধ্যে নিরবতা , নিশ্চল-নিশ্চুপ দেখে উপাসক উপাসিকাদের মধ্যে প্রকাশ পেল যে, ভিক্ষু সংঘের বিরোধ ও বিবাদের কারণে বুদ্ধ ঘোষিতারাম ছেড়ে পারিলেয্য বনে চলে গেলেন। ভিক্ষু সংঘের অবিদ্যা ও অহমিকা দেখে ভগবান বুদ্ধ একলা চলো নীতি গ্রহণ করলেন। এর মধ্যে উপাসক উপাসিকারা ভিক্ষু সংঘের প্রতি বীতশ্রদ্ধা জানাতে শুরু করলেন ।
তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যদি ভগবান বুদ্ধ কৌশাম্বীর পুণ্যধামে ফিরে না আসে তাহলে সংঘ সান্নিধ্য পরিত্যাগ করবেন । উপাসক উপাসিকাদের কারণে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে সম্যক চেতনার উন্মেষ হলো। তারা বুঝতে পারলেন তাদের ভুলের কথা । তাদের মধ্যে সম্প্রীতির রেখা জাগ্রত হলো । উপাসক উপাসিকাদের আহবানে বিবদমান ভিক্ষুসংঘের সমস্ত বিভেদ বিসংবাদ ভুলে পারিলেয্য বনে ছুটে গেলেন ভগবান বুদ্ধকে ফিরিয়ে আনতে। ভিক্ষু সংঘ ভগবান বুদ্ধের পাদপদ্মে বন্দনা নিবেদন পূর্বক বললেন– ’ প্রভূ, আমরা সমস্ত বিভক্তির রেখা অপনোদন করে অন্ধবিবর থেকে আলোর সন্নিধানে এসেছি । আমাদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ছিল তা ছিন্ন করে সংঘের মধ্যে পুনরায় ঐক্য ও সংহতি স্থাপিত হয়েছে, আমরা মৈত্রীর মিলনে অবগাহন করেছি । আপনি এবার প্রত্যাবর্তন করুন কৌশম্বীর আনন্দধাম ঘোষিতারামে ।”
ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি দেখে পারিলেয্য বন ছেড়ে কৌশাম্বীর ঘোষিতারামে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন । ঐ সময় ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে বলেন – ’ মূর্খেরা জানে না আমাদের কখন মৃত্যু হবে, যখন তা জানতে পারে , তখন সকল কলহের সাম্য বা অবসান ঘটে । ’পারিলেয্য বনে ভগবান বুদ্ধ অবস্থানের সময় শুভ ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে বন থেকে বানর একখানি মধুসহ মৌচাক সংগ্রহ করে শ্রদ্ধাপ্লুত চিত্তে বুদ্ধকে দান করেছিলেন । পারিলেয্য বনে ভগবান বুদ্ধকে হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা ও বানরের মধু দান বৌদ্ধ ইতিহাসে এক তাৎপর্যময় ঘটনা । তখন থেকেই এ ভাদ্রমাসের পূর্ণিমা সমগ্র বৌদ্ধ বিশ্বে মধু পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝