1. info@www.crimenews24.tv : Crime News 24 :
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

সাভারে কর্মরত সাংবাদিক সোহেল রানার নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার সত্যতা পায়নি পিবিআই

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

মোঃ শান্ত খান ঢাকা জেলা প্রতিনিধি

ঢাকার সাভারে কর্মরত দৈনিক তৃতীয় মাত্রার স্টাফ রিপোর্টার সোহেল রানার নামে যুবলীগ নেতার দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার কোনো সত্যতা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলায় উল্লিখিত পেনাল কোড ধারার অপরাধের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া, অপর বিবাদীদের সঙ্গে সাংবাদিক সোহেল রানার পরিচয় না থাকা ও সাংবাদিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি, এই মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে আদালতে।

২০২৪ সালের ১৭ই আগষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার সাভার আমলী আদালতে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন ঢাকা জেলা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উপ-পুলিশ পরিদর্শক এস এম মুক্তি মাহমুদ।
পরে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।

শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিক সোহেল রানার পক্ষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিগ্যাল সলিউশন চেম্বারের (এলএসসি) চেয়ারম্যান এডভোকেট আল মামুন রাসেল।

মামলায় সাংবাদিক সোহেল রানাকে প্রধান করে ৪ জনকে বিবাদী করা হয়। মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন- সুমন মিয়া, আকবর আলী ও মো: হান্নান। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলাটির উৎপত্তি করা এবং বিবাদীদের কেউ কাউকে চিনেন না বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মামলা দায়েরের পেছনে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আ.লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম রাজীবের মালিকানাধীন রাজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ওরফে টেপা জাকির ওরফে মামা জাকির, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল আলম ওরফে এস এ শামীম ও কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদ এর সমন্বয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাটি দায়ের হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অপরদিকে, মামলার বাদী ঢাকার সাভার উপজেলার রেডিও কলোনি নয়াবাড়ি এলাকার সিরাজ সরকারের ছেলে ও সাভার পৌর যুবলীগ নেতা মো: শাহজাহান। মামলার বাদী শাহজাহান সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ক্যাডার আপেল মাহমুদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। যুবলীগ নেতা শাহজাহান একাধিক মামলার বাদী ও সাক্ষী হওয়ায় এলাকায় মামলাবাজ হিসেবেও পরিচিত বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী মো: শাহজাহান একজন ব্যবসায়ী। শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের উপায় দেখিয়ে সাংবাদিক সোহেল রানাসহ মামলার বিবাদীরা তার নিজ বাড়িতে এসে শাহজাহানের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। গত বছর ৫ই মে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে রেডিও কলোনি স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় বিবাদীরা পুনরায় চাঁদা দাবি করে একই সঙ্গে বাদীর কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এসব বিষয় উল্লেখ করে গত বছরের ১৫ই মে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার সাভার আমলী আদালতে দাখিল করা হয় মামলাটি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার ঢাকা জেলাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৭ আগষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার সাভার আমলী আদালতে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন ঢাকা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মো: শাহজাহান, মো: সুয়েল মিয়া, মো: সোহান মিয়া, আবু বক্কর, সেলিনা আক্তার, কুলসুম বেগম এবং কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে শাহজাহানের নয়াবাড়ি রেডিও কলোনি এলাকার নিজ বাড়িতে অবৈধভাবে ওর-স্যালাইন, টেস্টি স্যালাইন, ইনো, যৌন উত্তেজক জিনসিং, কসমেটিক্স প্রসাধনীসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য সামগ্রী তৈরি করে কৌশলে কয়েকজন হকারের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করে আসছিল। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বিরোধ তৈরি হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ৪ই মে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ টার দিকে সাভার মডেল থানাধীন রেডিও কলোনি এলাকার জনৈক জিয়ার চায়ের দোকানের সামনে শাহজাহান, তার সহযোগী সুয়েল মিয়া, সোহান মিয়া ও আপেল মাহমুদ অবৈধ প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রয় করছিল। স্থানীয়রা এতে বাঁধা দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শাহজাহান ও আপেল মাহমুদ পক্ষের হাতে অপরপক্ষ রাকিব, শুভ ও শামসুন্নাহার নামে এক গৃহবধূ গুরুতর আহত হন। পরে যুবলীগ নেতা শাহজাহান ও স্থানীয় শামসুন্নাহার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে সাভার থানা পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্যান্য
সাংবাদিকদের মত পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক সোহেল রানা ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে সেখানকার অবৈধ কর্মকান্ডের হোতা যুবলীগ নেতা শাহজাহানের সঙ্গে কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন সাংবাদিক সোহেল রানা। এ নিয়ে কয়েকবার সাংবাদিক সোহেল রানাকে সংবাদ প্রকাশ করতে নিষেধ করেন কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদ। অনুসন্ধান অব্যাহত রাখায় সাংবাদিক সোহেল রানাকে নানা ধরনের হুমকি ও তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার শুরু করেন আপেল মাহমুদ। পরবর্তীতে ফেসবুকে অপপ্রচার ও নানাভাবে হুমকির বিষয়ে গত ২০২৪ সালের ৮ই মে সাংবাদিক সোহেল রানা বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় দুটি জিডি দায়ের করেন। জিডি নং- ৬৪৮ এবং ৬৭৮। সোহেল রানার দায়ের করা জিডির প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় যুবলীগ নেতা শাহজাহান ও আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রসিকিউশন দেয় পুলিশ। ২০২৪ সালের ১৩ই মে সংবাদপত্র দৈনিক আজকের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক এস এম আবু সাঈদ এবং পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদকে আইনী নোটিশ দেওয়ার ২ দিনের মাথায় এই মামলাটি আদালতে দায়ের করেন যুবলীগ নেতা মো: শাহজাহান।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, অভিযুক্ত ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করেছে পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা। সাংবাদিক সোহেল রানা ও বাদীর মোবাইলের সিডিআর নিয়ে দেখা গেছে তাদের মধ্যে কোন ধরনের কল আদান-প্রদান ও কথোপকথন হয়নি। একই সঙ্গে বাদীর মনোনীত মামলার চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাদীর কাছে চাঁদা চাওয়া ও টাকা আদায়ের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া মামলার নথিতে যে অপরাধের পেনাল কোডগুলো উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর কোনোটার সাথে বিবাদীদের কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী মো: শাহজাহান বিবাদীদের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়া ও ১০ হাজার টাকা নেওয়ার কোনো প্রকার প্রমাণ দিতে পারেনি।

জানা গেছে, সাংবাদিক সোহেল রানার দায়ের করা মামলায় যুবলীগ নেতা মো: শাহজাহান, কথিত সাংবাদিক আপেল মাহমুদ, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল আলম ওরফে এস এ শামীমসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে একাধিক হত্যা মামলা থাকায় প্রত্যেকে পলাতক রয়েছে। তবে রাজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ওরফে টেপা জাকির ওরফে মামা জাকির বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক সোহেল রানার নামে মিথ্যা মামলা হওয়ায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামসহ সাভার ও আশুলিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝟐𝟎𝟐𝟐-𝟐𝟎𝟐𝟑 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝 𝐀𝐥𝐥 𝐫𝐢𝐠𝐡𝐭𝐬 𝐫𝐞𝐬𝐞𝐫𝐯𝐞𝐝.
𝐃𝐞𝐬𝐢𝐠𝐧 & 𝐃𝐞𝐯𝐞𝐥𝐨𝐩𝐞𝐝 𝐛𝐲: 𝐏𝐨𝐢𝐧𝐭 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚 𝐋𝐢𝐦𝐢𝐭𝐞𝐝