মামুনুর রশিদ তরফদার, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ভাসানীগাঁও গ্রামের ডা: আব্দুর রহিম। পেশায় দন্ত চিকিৎসক। এখন অবসরে কাটে সময়। থাকেন মৌলভীবাজার শহরে। এমন সুযোগে গ্রামের দেয়ালঘেরা পৈত্রিক বাড়ির ভিতর দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় পরিত্যক্ত বাড়িটিতে রাতের আঁধারে গত ১৮ আগস্ট লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ডা: আব্দুর রহিম নিজেই। তার দাবী, ঘটনার সময় আলমিরা ভেঙ্গে কাপর-চোপর সহ জমিজমার কাগজপত্র লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বীত্তরা। এর পর থেকেই কার্যত ভয় আর শঙ্কায় দিন পাড় করছেন ডা: আব্দুর রহিম এর পরিবার। শুধু তাই নয়, বাড়ির পাশের রাস্তা নিয়ে কথিত গ্রামবাসীর নাম দিয়ে মিথ্যা দখল আর হুমকি প্রদানের মতো প্রোপাগান্ডা চালানোর অভিযোগ ডা: আব্দুর রহিম এর। অভিযোগের তীর প্রতিবেশী শাহজাহান আহমদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ডা: আব্দুর রহিম ও তাঁর ছেলে দন্ত চিকিৎসক রেজাউল আহমদ সাগর এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা জোরপূর্বক দখল, হুমকি ও যানবাহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে এবং সরেজমিন ঘুরে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং কবরস্থানমূখী সড়কটির শাহজাহান আহমদের বাড়ির সাথে হওয়ার সুবাধে তিনি নিজেই গাছ লাগিয়ে মূল সড়কের বেশ কিছু অংশ দখলে নেয়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে এ প্রতিবেদকের কাছে।
ভাসানীগাঁও গ্রামের শাকিল নামে স্কুল পড়–য়া কিশোরের সাথে দেখা হয়। রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কিশোর জানায়, কোন বাঁধা দেয়া হয়নি, মূলত রাস্তার উপর বসানো রিং ভাঙ্গার কারণে যানবহন চলাচল করতে পারেনা।
ডা: আব্দুর রহিম জানান, গত ২৮ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জোরপূর্বক রাস্তা দখলের অভিযোগে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পাওয়া নোটিশের জবাবে আব্দুর রহিম ইউপি চেয়ারম্যনকে জানান, ইউএনও মহোদয় সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে যদি রাস্তা মেপে সত্যতা পান তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই। এসময় আব্দুর রহিম চেয়ারম্যানকে জানান, তিনি তাঁর ছেলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। এর পর আমি ভারতে চলে গেলে সেই সুযোগে শাহজাহান মিয়া এলাকার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যানের প্রতি নারাজি জানান। নারাজি দেয়ায় এসিল্যান্ড ও স্থানীয় মেম্বার নিয়ে এসে রাস্তার কথা বলে বাড়ির অপর প্রান্তের দেয়াল ভেঙ্গে মূল সড়কের সাথে রাস্তা করা চেষ্টা করলে তাতে স্থানীয় কয়েকজন আপত্তি তুলেন।
আব্দুর রহিম অভিযোগ করে বলেন, আগস্টের প্রথম সাপ্তাহে আমি সিলেটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জানতে পারি গভির রাতে আমার বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গা হয়েছে। ওই সময় সেখানে আশপাশের লোকজন দেয়াল ভাঙ্গতে বারণ করলেও তাতে কোন কথা শুনেননি শাহজাহান আহমদ ও তার ভাই। এর পর আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সিলেট থেকে গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শাহজাহানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ঠিক করে দেয়ার প্রতিশ্রতি দেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মো. শাহজাহান আহমদ দাবী করে বলেন, সবার যাতায়াতের জন্য রাস্তার দু’পাশের দখল করা অংশ উদ্ধার করতে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি, এখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। গাছ লাগিয়ে নিজেও রাস্তা দখলে রেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি স্বীকারও করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, রাস্তার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনি লিখিত রিপোর্ট দেয়ার পর জানতে পারবো সরেজমিন কী হয়েছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলার ৮ নং মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী’র ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।